আমার ব্লগে আগেই সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে বেশকিছু লিখা লিখেছি। ওসব আডভান্স টপিকের লিখা ছিলো। এখন চাচ্ছি এই বিষয় এর খুঁটিনাটি নিয়ে লিখবো। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে কিছু ফেদা পেঁচাল (আজাইরা কথা) বলবো (আসলে আজাইরা না, কথা আছে 🙂 )।
কয়েকদিন পরীক্ষার জ্বালাতনে কয়লা হয়ে গিয়েছি। পরীক্ষা আর 1 টা বাকি থাকতেই আবার শাটডাওন। যাইহোক, কি আর করার। সংখ্যাতত্ত্বের সংজ্ঞাটি আগে ভালভাবে বুঝে নিই।
সংখ্যাতত্ত্ব বা Number theory হলো গণিতের একটি শাখা যেখানে ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যা এবং তাদের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। অনেক আগে থেকেই গণিতবিদেরা প্রকৃত সংখ্যা বা Natural number বা ধনাত্মক পূর্ণসংখ্যাকে বিভিন্ন ধরনে বিভক্ত করে রেখেছেন। যেমন,
- বিজোড়: 1, 3, 5, 7, 9, 11, . . .
- জোর: 2, 4, 6, 8, 10, . . .
- বর্গ: 1, 4, 9, 16, 25, 36, . . .
- ঘন: 1, 8, 27, 64, 125, . . .
- মৌলিক: 2, 3, 5, 7, 11, 13, 17, 19, 23, 29, 31, . . .
- যৌগিক: 4, 6, 8, 9, 10, 12, 14, 15, 16, . . .
- 1 (modulo 4) 1, 5, 9, 13, 17, 21, 25, . . .
- 3 (modulo 4) 3, 7, 11, 15, 19, 23, 27, . . .
- ত্রিকোণ সংখ্যা 1, 3, 6, 10, 15, 21, . . .
- পারফেক্ট: 6, 28, 496, . . .
- ফিবোনাচ্চি: 1, 1, 2, 3, 5, 8, 13, 21, . . .
- ইত্যাদি ইত্যাদি
সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে আরও লিখা
সংখ্যাতত্ত্ব: বাইনারি এক্সপোনেন্টিয়েশন
সংখ্যাতত্ত্ব: ইউক্লিডিয়ান অ্যালগরিদম ও গ.সা.গু
সংখ্যাতত্ত্ব: এক্সটেন্ডেড ইউক্লিডিয়ান অ্যালগরিদম
এদের অনেকগুলোই আমাদের সবার জানা, যদিও কিছু অজানা থাকতে পারে। যেমন 1 (modulo 4) । এর মানে হলো 4 দিয়ে ভাগ করার পরে এসব সংখ্যার ভাগশেষ 1 থেকে যাবে। 3 (modulo 4) ও একই, এক্ষেত্রে 3 ভাগশেষ থাকবে। ত্রিকোণ সংখ্যা বা (Triangular number) হলো এমন ধরনের সংখ্যা যাদের দিয়ে আমরা চিত্রের মত সমবাহু ত্রিভুজ বানাতে পারি।
Perfect number হলো এমন ধরনের সংখ্যা যাদের এর সকল সার্থক গুণনীয়ক বা Proper divisor এর যোগফল হিসেবে লিখা যায়। কোন সংখ্যা x এর সার্থক গুণনীয়ক হলো x বাদের সকল গুণনীয়ক। যেমন 6 এর সার্থক গুণনীয়ক গুলো হলো 1,2,3 এবং এদের যোগফল । তাই ৬ একটি পারফেক্ট নাম্বার।
সংখ্যাতত্ত্ব : বিভাজ্যতার নীতি (Divisibility rule)
আমরা বাংলাদেশের ছাত্ররা সপ্তম শ্রেণিতেই বিভাজ্যতার নীতি পরে এসেছি। এখন একটু ঝালাই এর পালা। আমরা প্রথমেই বিভাজ্যতার সংজ্ঞা দেখে নিবো,
সংখ্যাতত্ত্ব টিউটোরিয়ালঃ কোন পূর্ণসংখ্যা n কে কোন পূর্ণসংখ্যা d তখনই নিঃশেষে বিভক্ত করে যখন আরেকটি পূর্ণসংখ্যা k থাকে যেনো হয়। n এবং d এর মধ্যে সম্পর্ককে দিয়ে লিখা হয়। এর মানে হলো d, n কে নিঃশেষে বিভক্ত করে।
এবং কিন্তু এক কথা না। , কিন্তু মানে হলো d, n কে নিঃশেষে ভাগ করতে পারে কিনা তা। অর্থাৎ সবসময় সত্য। যদি d, n কে নিঃশেষে ভাগ করতে না পারে তাহলে তাকে আমরা লিখবো।
সংখ্যাতত্ত্ব: বিভাজ্যতার বৈশিষ্ট্য এবং উপপাদ্য
(১) : এখানে n=0, সংজ্ঞামতে । আমরা যদি k=0 ধরি তাহলে d যাইহোক n=0 পাবো। সতরাং বলতে পারি d সর্বদাই 0 কে নিঃশেষে ভাগ করে।
(২) : এর মানে হলো কোন প্রকৃত সংখ্যা n শুন্য দিয়ে তখনি ভাগ যাবে যখন হবে। অর্থাৎ সংজ্ঞামতে । সূত্র এখানে।
(৩) : এইটা সত্য কারণ আমরা যদি এর সূত্রে ধরেনেই, তাহলে ডানপক্ষ = বামপক্ষ হবে।
(৪) : এখানে ধরে নিলেই আমরা প্রমাণ পাই।
(৫) : d তখনই 1 কে ভাগ করবে যখন d=1 অথবা d=-1 হবে।
(৬) (Transitivity) যদি, এবং হয় তবে সত্য হবে। : অর্থাৎ যদি d দ্বারা n কে ভাগ যায় এবং n দ্বারা m কে ভাগ যায় তবে অবশ্যই d দ্বারা m কে ভাগ করতে পারবো।
প্রমানঃ যেহেতু d, n কে এবং n, m কে ভাগ করে তাই আমরা বিভাজ্যতার সংজ্ঞানুসারে লিখতে পারি, এবং । এখন n এর মান 2 নং এ বসিয়ে পাই, যেহেতু উভয়েই পূর্ণসংখ্যা তাই অবশ্যই পূর্ণসংখ্যা। ধরে পাই, অর্থাৎ m, d দ্বারা বিভাজ্য।
উপরের 2 এবং 5 নং এ আমরা implies ( ) চিহ্ন ব্যবহার করেছি। মানে হলো যদি a ঘটনা সত্য হয় তবে b অবশ্যই ঘটবে। কিন্তু এমন না যে a মিথ্যা হলে b ঘটবে না। কিন্তু a ঘটলে b ঘটবে আমরা নিশ্চিত।
অনুসিধান্ত
আমরা জানি, যখন হয় এবং যখন হয়।
- যদি হয়, তাহলে এবং সত্য।
- যদি হয় তবে সত্য।
- সবথেকে বড় সংখ্যা যা একটি অশূন্য সংখ্যা n কে ভাগ করে তার মান হলো ।
প্রমাণ:
(১) যদি হয় ( d এর একটি গুণনীয়ক) তবে আমরা লিখতে পারি, যেহেতু -k একটি পূর্ণসংখ্যা, তাই বিভাজ্যতার শর্তানুসারে আমরা বলতে পারি, -d অবশ্যই n এর একটি গুণনীয়ক। একইভাবে আমরা লিখতে পারি, , অর্থাৎ d, -n এর একটি উৎপাদক।
(২) প্রথমে আমরা ধরেনিই, তাই । অতএব হলে অবশ্যই হবে। আবার হলে । আমরা (১) থেকে প্রমাণ করেছি সত্য।
সংখ্যাতত্ত্বের কিছু সাধারণ বিভাজ্যতার নীতি
দুই দ্বারা বিভাজ্যতার নীতি
দুই দ্বারা শুধু জোড় সংখ্যাগুলোকেই নিঃশেষে ভাগ করা সম্ভব। কারণ জোড় সংখ্যার উৎপাদকগুলোতে সর্বনিম্ন একটি হলেও 2 থাকে তাই আমরা বিভাজ্যতার সংজ্ঞা অনুসারে হলে k এর জন্য একটি পূর্ণ সংখ্যা আকারে লিখতে পারি। যেমন এখানে আর ।
তিন দ্বারা ও নয় দ্বারা বিভাজ্যতার নীতি
যখন কোন সংখ্যার অঙ্ক গুলোর যোগফল 3 দ্বারা বিভাজ্য হয় তখন সংখ্যাটিও 3 দ্বারা বিভাজ্য হয়। যেমন 27 এর জন্য , এখানে 9 কিন্তু 3 দ্বারা বিভাজ্য। একটি মজার বিষয় হলো আমরা যেই যোগফল পাবো এই যোগফলের অঙ্কগুলোর যোগফলও 3 দ্বারা বিভাজ্য। যেমন
16,499,205,854,376 এখানে অঙ্কগুলোর যোগফল হলো 69। এখন ধরেন 69, 3 দ্বারা ভাগ যায় না কি এটা দেখার তেল পেলেন না, তাই আবার আমরা 6+9=15 বের করলাম। তবুও তেল পেলাম না। তাই 1+5=6 পেলাম। এখানে 6, 3 দ্বারা বিভাজ্য। তাই 15, 69 এবং 16,499,205,854,376 ও ৩ দ্বারা বিভাজ্য। (সংখ্যাতত্ত্ব টিউটোরিয়াল)
নয় দ্বারা বিভাজ্যতার নিয়ম হুবুহু 3 এর মতই, অঙ্ক গুলোর যোগফল অবশ্যই ৯ দ্বারা বিভক্ত হতে হবে। যেমন 81 এর খেতে 8+1=9। এখানে লক্ষণীয় যে, 9 দ্বারা বিভাজ্য যেকোনো সংখ্যা 3 দ্বারা অবশ্যই বিভাজ্য।
চার দ্বারা ও আট দ্বারা বিভাজ্যতার নীতি
কোন সংখ্যা 4 দ্বারা বিভাজ্য হতে হলে এর শেষ দুই অঙ্ক দ্বারা গঠিত সংখ্যাকে অবশ্যই 4 দ্বারা ভাগ করা যেতে হবে। যেমন 144 একটি সংখ্যা, এই সংখ্যাটি 4 দ্বারা ভাগ যাবে। কারণ এর শেষ দুই অঙ্ক নিয়ে গঠিত সংখ্যা 44, 4 দ্বারা ভাগ যায়।
4 এর মতই যদি সংখ্যাকে 8 দ্বারা বিভাজ্য হতে হয় তবে অই সংখ্যার শেষ 3 অঙ্কে 8 দ্বারা বিভক্ত হবে। যেমন 9864, এখানে 864, 8 দ্বারা বিভাজ্য। তাই 9864 ও 8 দ্বারা বিভাজ্য। এই নিয়ম শুধু 3 বা ততোধিক অঙ্কযুক্ত সংখ্যার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
পাঁচ দ্বারা ও দশ দ্বারা বিভাজ্যতার নীতি
যদি কোন সংখ্যার শেষ অঙ্কটি 5 অথবা 0 হয় তবেই সংখ্যাটি 5 দ্বারা ভাগ যাবে। সোজাসাপ্টা হিসাব। উদাহরণ 10, 15 ,20 ইত্যাদি।
10 দ্বারা বিভাজ্য সংখ্যাগুলোর শেষ অঙ্ক অবশ্যই শুন্য হবে। যেমন 100, 110 ইত্যাদি।
ছয় দ্বারা এবং বারো দ্বারা বিভাজ্যতার নীতি
আমরা যদি 6 কে ভেঙ্গে লিখই তাহলে পাবো অর্থাৎ ৬ দুইটি সংখ্যাদ্বারা গঠিত। তাই 6 যদি কোন সংখ্যা n কে ভাগ করে তবে অবশ্যই n কে 2 দ্বারা ভাগ যেতে হবে এবং একই সাথে 3 দ্বারা ভাগ যেতে হবে। উদাহরণ দেখি,
উপরের সমীকরণে লবের 2 হরের 2 কে নিয়ে উধাও হয়ে যাবে। তাই আমরা পাবো , এখানে 5+1=6 যা 3 দ্বারা বিভাজ্য, তাই বলতে পারি 51 ৩ দ্বারা বিভাজ্য। সুতরাং 102, 6 দ্বারা বিভাজ্য।
একই ভাবে যদি 12 দ্বারা বিভাজ্য হতে হয় তবে সংখাটিকে অবশ্যই প্রথমে 6 দ্বারা এবং তারপর দুই দ্বারা ভাগ যেতে হবে। যেমন, 24। এবং ভাগফল 2 কে 2 দ্বারা ভাগ যায়। তাই আমরা বলতে পারি 24 কে 12 দ্বারা ভাগ যায়। আরেকটি উদাহরণ দেখি। যেমন 18। এই সংখ্যাটিকে আলাদা ভাবে 2 দ্বারাও ভাগ যায় 6 দ্বারাও ভাগ যায়। তবুও 12 দ্বারা ভাগ যায় না। কেন?
কারণ এবং 3, 2 দ্বারা বিভাজ্য নয়।
সাত দ্বারা বিভাজ্যতার নীতি
আমরা যদি কোন সংখ্যা থেকে এর শেষ অংকটি আলাদা করে নিই এবং বাকি অঙ্কগুলো নিয়ে গঠিত সংখ্যা থেকে শেষ অঙ্কের দিগুণ বাদ দিই তবে আমরা যেই সংখ্যাটি পাবো তা 7 দ্বারা বিভাজ্য হলে সংখ্যাটিও 7 দ্বারা বিভাজ্য। যেমন, 658 এর ক্ষেত্রে। error, এখানে 49, 7 দ্বারা বিভাজ্য, তাই 658 ও 7 দ্বারা বিভাজ্য।
এগার দ্বারা বিভাজ্যতার নীতি
এই নীতিটা বেশ ইন্টারেস্টিং। ধরই একটি সংখ্যা n=2343, এখন যদি আমরা এমন ভাবে এদের যোগ করি যেন যারা জোড় অবস্থানে আছে তাদের চিহ্ন ঋণাত্মক হয় এবং এর পর যোগফল যদি 11 দ্বারা ভাগ যায় তবে আমরা বলতে পারবো n কে 11 দিয়ে ভাগ যায়। যেমন, , তাই 2343, 11 দিয়ে বিভাজ্য।
সংখ্যাতত্ত্ব: আমরা যদি মৌলিক সংখ্যার বিভাজ্যতার নীতিগুলো বের করতে পারি তবে খুব সহজেই অন্য সকল সংখ্যার জন্যও বের করতে পারবো। যেমন, যদি বলি 14 দ্বারা বিভাজ্যতার নীতি কি? তাহলে আমরা প্রথমেই দেখবো 14 কে আমরা কিভাবে ভাঙ্গিয়ে লিখতে পারি। । তাই আমরা বলতে পারি 14 দিয়ে ভাগ যাবে এমন সংখ্যাগুলোই যেসব সংখ্যাকে 2 এবং 7 দ্বারা ভাগ করা যায়। অর্থাৎ যেসব সংখ্যাকে উৎপাদকে বিশ্লেষণ করলে (এখানে x যেকোনো সংখ্যা) পাওয়া যাবে এসব সংখ্যাকে আমরা 14 দিয়ে ভাগ করতে পারবো। লক্ষণীয় এখানে 2 এবং 7 মৌলিক সংখ্যা এবং আমরা ১৪ দিয়ে বিভাজ্যতা পরীক্ষা করার জন্য প্রথমে একটি দিয়ে ( 2 অথবা 7) ভাগ করবো, তারপর ভাগফলকে আরেকটি দিয়ে ভাগ করবো।
তো এই ছিলো আজকের মত সংখ্যাতত্ত্ব কাহিনী। সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে পরের লিখা গুলোও খুব দ্রুতই আসবে। আজকের লিখাটা একেবারে বেসিক ছিলো। আমরা এই সিরিজে প্রগ্রামিংকে সাইডে রেখে গণিতকে ফোকাস করতেছি।
সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে আরও জানতে এই লিখাগুলো দেখুন,
সংখ্যাতত্ত্ব: মৌলিক সংখ্যা (prime number) ও তার অ্যালগরিদম
সংখ্যাতত্ত্ব: মডুলার অ্যারিথমেটিক (Modular arithmetic) – Big mod
ঝালিয়ে নিয়েছি ভাইয়া, তবে মনে থাকছে না, আপনার সহায়তার জন্য অনেক ধন্যবাদ❤️, টেক লাভ ভাইয়া💝।
আপনার মূল্যবান মতামতের জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া, টেক লাভ ❤️